পিরিয়ড না হলে করনীয় কি

প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক নারীর নিয়মিত ও সময়মতো মাসিক বা পিরিয়ড হওয়াটা সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ। একজন নারীর গর্ভধারণের সক্ষমতা বোঝার যায় মাসিক বা পিরিয়ড এর উপরে। একজন নারীর প্রতিমাসে স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী পিরিয়ড হয়। কোনো কারণে যদি মাসিক বা পিরিয়ড না হয় তাহলে করণীয় কী? আমরা এই আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করসি পিরিয়ড না হওয়ার কারণ, পিরিয়ড না হলে কি কি করতে হবে। কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে, পিরিয়ড না হলে কি কি সমস্যা হয়, পিরিয়ড না হলে কি খাওয়া উচিত ইত্যাদি বিষয় জানতে পারতেন।

পিরিয়ড না হওয়ার কারণ

পিরিয়ড দেরি হলে প্রথমেই নিশ্চিত হয়ে নিবেন আপনি প্রেগন্যান্ট হয়েছেন কিনা। এছাড়াও নিয়মিত পিরিয়ড না হওয়ার পেছনে অনেক গুলো কারণ রয়েছে। এর মধ্যে হরমোনের জনিত সমস্যা অন্যতম। এ সমস্যা অবিবাহিত মেয়েদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। আবার একজন মেয়ে দীর্ঘ দিন মানসিক চাপে থাকলে মাসিক দেরিতে হতে পারে। এছাড়া জন্মনিয়ন্ত্রণ জন্য যেমন-পিল, প্যাচ, ইনজেকশন, আইইউডি। এগুলো ব্যবহার করলে পিরিয়ড দেরিতে হতে পারে।

পিরিয়ড না হলে কি খাওয়া উচিত

ঘরোয়া কিছু উপায় অনিয়মিত পিরিয়ড নিয়মিত করতে পারবেন।

  • কাঁচা পেঁপে খাওয়া: নিয়মিত কাঁচা পেঁপে খেলে অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যা দূর হবে। তবে পিরিয়ড চলাকালীন পেঁপে খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
  • আদা ও মধু: একটুর আদা হালকা পানির নিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে। এবার এর সঙ্গে সামান্য মধু দিয়ে পানিটি দিনে তিনবার খাবারের পর পান করুন। ফলে আপনার পিরিয়ড নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
  • অ্যালোভেরা: অনেক পুষ্টি গুন রয়েছে অ্যালোভেরার মধ্যে অনিয়মিত পিরিয়ডের নিয়ন্ত্রণ করতে অ্যালোভেরা অনেক কার্যকরী। অ্যালোভেরা জেল এর সঙ্গে এক চামচ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খাবার খাওয়ার আগে এটি খেতে হবে। তবে এটি পিরিয়ড চলাকালীন খাওয়া যাবে না।

পিরিয়ড না হলে করনীয়

ওজন নিয়ন্ত্রণ: খুব বেশি ওজন বা কম ওজন হওয়ার কারণে অনেক সময় মাসিক বন্ধ হতে পারে। তাই আপনার শরীরে উচ্চতার সঙ্গে ঠিক রেখে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।


দারচিনি: মাসিককে নিয়মিত করায় খুবই কার্যকরি গুন রয়েছে এই দারচিনিতে। পিরিয়ডের সময় যদি অতিরিক্ত রক্তক্ষয় হয়, তলপেট ব্যথা করে, বমিভাব হতে থাকে তাহলে দারচিনি খাওয়া কার্যকরি ফলাফল পাবেন।


সুষম ও প্রোটিনজাতীয় খাবার: একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর শরীরে রক্তশূন্যতা বা ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকলে অনেক সময় মাসিক হতে দেরি হয়। ক্যালসিয়ামের অভাব দূর করতে নিয়মিত তাজা মাছ-মাংস, সবুজ শাক-সবজি ও ফলমূল নিয়মিত খেতে হবে এছাড়াও সুষম ও প্রোটিনজাতীয় খাবার প্রতিনিয়ত খেতে হবে।


পানি পান করা: অনেকেই প্রয়োজনের তুলনায় কম পানি পান করে। শরীরে পানির ঘাটতি থাকলে ইউরেটরে ইনফেকশন সৃষ্টি হয়। ফলে পিরিয়ড বা মাসিক অনিয়মিত হয়। এ সমস্যা দূর করতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।


জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি: প্রাপ্তবয়স্ক নারীর যদি পিল গ্রহণ করেন, তা হলে মাসিক বন্ধ হওয়ার পরও পিল খেতে হবে। মাসিক না হলে বাদামি বর্ণের পিল খেতে হয়। তাহলে মাসিক হয়ে। আর যদি মাসিক না হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরার্মশ নিতে হবে।

অতিরিক্ত পরিশ্রম, মানসিক চাপ, অতিরিক্ত ওজন কম থাকলে জীবন যাত্রা পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে। যেমনঃ যথেষ্ট বিশ্রাম নেওয়া, অতিরিক্ত মানসিক চাপ মুক্তির জন্য পরিবার ও বন্ধুদের সাথে বেশি বেশি সময় কাটানো ও পর্যাপ্ত আলো-বাতাসে ঘোরাফেরা করা, পর্যাপ্ত পরিমাণে সুষম খাবার খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা, ফাস্টফুড জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে।

একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর জন্য নিয়মিত পিরিয়ড হওয়া স্বাভাবিক কিন্তু যখন মাসিক অনিয়মিত হয় তখন অবশ্যই বিশেষজ্ঞ গাইনি ডাক্তারের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। যদি হরমোন জনিত কোনো সমস্যা দেখা যায়, তা হলে সে অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে, যাতে পরবর্তীতে আপনার মাসিক স্বাভাবিক এবং বাচ্চা নিতে সমস্যা না হয়।

সহবাসের পর পিরিয়ড না হলে করণীয়

সহবাস বা শারীরিক মিলনের পর যদি নির্দিষ্ট সময়ে পিরিয়ড না হয় তাহলে অবশ্যই আপনাকে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হবে। মাসিক মিস হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ুন।

আশা করি এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে জানতে পারছেন নিয়মিত পিরিয়ড না হওয়ার কারন এবং এর প্রতিকার। এছাড়াও আপনাকে মনে রাখতে হবে একজন নারীর জন্য নিয়মিত পিরিয়ড হওয়া স্বাভাবিক এর ব্যতিক্রম হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

Share Post

Leave a Comment